আজকে আমরা আলোচনা করব ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম – Driving License Renewal করার পদ্ধতি সম্পর্কে। ড্রাইভিং লাইসেন্স (Driving License) অর্থ কোন একটি নির্দিষ্ট শ্রেনীর মোটরযান চালোনোর জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক প্রদত্ত দলিলকে ড্রাইভিং লাইসেন্স বলা হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে পাব?
আপনারকে সর্বপ্রথম লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমান ফি জমাদিয়ে অনলাইন সিস্টেম থেকে আপনার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আপনার নামে ইস্যু হয়ে যাবে এবং আপনি সাথে সাথেই অনলাইন থেকে আপনার নামে ইস্যুকৃত লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
২। আবেদনকারীর ছবি [ছবির সাইজ সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি (৩০০ x ৩০০ পিক্সেল)]
৩। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ফর্মের জন্য এখানে ক্লিক করুন
৪। জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
৫। ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি), [ আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় তবে বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল সংযুক্ত করতে হবে ]
৬। বিদ্যমান ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্ক্যান কপি [ ড্রাইভিং লাইসেন্সের নবায়ন/শ্রেণী পরিবর্তন/শ্রেণী সংযোজন/ লাইসেন্সের ধরণ পরিবর্তণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ] (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
৭। অনলাইনে আবেদন দাখিলের সময় ভুয়া তথ্য প্রদান করা হলে তার লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলসহ আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৮। নির্ধারিত ফী, ১ ক্যাটাগরি-৩৪৫/-টাকা ও ২ ক্যাটাগরি-৫১৮/-টাকা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।
এরপর লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এ প্রদত্ত নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট এ আপনাকে অংশগ্রহন করতে হবে। উক্ত পরিক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মূল কপি ও লিখিত পরিক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য কলম সাথে নিয়ে পরিক্ষা কেন্দ্রে যেতে হবে।
লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশিস্নষ্ট সার্কেল অফিসে আপনাকে আবেদন করতে হবে। আপনার বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হবে। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রন্টিং সম্পন্ন হলে আপনাকে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১। নির্ধারিত ফরমে আপনাকে আবেদন করতে হবে।
২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩। জাতীয় পরিচয়পত্র এর সত্যায়িত ফটোকপি।
৪। নির্ধারিত ফী (পেশাদার- ১৬৭৯/-টাকা ও অপেশাদার- ২৫৪২/-টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
৫। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
৬। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম : সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ০৪ ধারা অনুযায়ী একজন ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক, নতুবা একই আইনের ৬৬ ধারা অনুযায়ী আপনার ০৬ মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ২৫০০০/- টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রধানত পেশাদার এবং অপেশাদার দুই ধরনের হয়ে থাকে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ০৫ বছর এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর হয়ে থাকে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম : এখন জানতে হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির পর যখন ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তখন কিভাবে পুনরায় ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ বাড়াতে হবে অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম – Driving License Renewal করতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম – Driving License Renewal করতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম
১। অপেশাদার: ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম : আপনাকে প্রথমে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭/- টাকা এবং ১৫ দিনের পরে প্রতি বছরের জন্য ২০০/- টাকা জরিমানাসহ টাকা জমা দিতে হবে।
আপনার আবেদনপত্র ও সংযুক্ত সকল কাগজপত্র সঠিক থাকলে একইদিনে আপনার বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহন করা হবে। স্মার্ট কার্ড wপ্রন্টিং সম্পন্ন হলে আপনাকে SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
২। পেশাদার: ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম : পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীকে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের পরে প্রতি বছর ২০০/- টাকা জরিমানাসহ টাকা জমা দিতে হবে।
গ্রাহকের বায়োমেট্রেক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণের জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হবে। স্মার্ট কার্ড wপ্রন্টিং এর সম্স্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আপনাকে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম এর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। ফরম পেতে এখানে ক্লিক করুন।
- রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (সর্বনিম্ন ৮ম শ্রেনী পাশ)।
- নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন।
- সদ্য তোলা ০১ (এক) কপি পাসপোর্ট এবং ০১ (এক) কপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকৃতি:
- পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।
- পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে এবং পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ০৩ বছর হতে হবে।
- পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে এবং পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ০৩ বছর হতে হবে।
ডুপ্লিকেট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
- নির্ধারিত ফরমে আপনাকে আবেদন করতে হবে। ফরম পেতে এখানে ক্লিক করুন।
- থানার জিডি কপি ও ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স।
- নির্ধারিত ফি (হাই সিকিউরিউটি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে ৮৭৫/- টাকা) বিআরটি এর নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
- সদ্য তোলা ০১ (এক) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
বিশেষ সতর্কতা: নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম – Driving License Renewal এর জন্য কোন দালালের সরনাপন্ন না হয়ে সরাসরি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃপক্ষের নিকট নির্দিষ্ট ফি ও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিবেন।
একজন সচেতন ড্রাইভার হিসাবে আপনি যখনই নির্দিষ্ট শ্রেনীর কোন গাড়ি ড্রাইভ করবেন তখন আপনার অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।