উপসর্গের বৈশিষ্ট্য লেখ? উপসর্গের শ্রেণীবিন্যাস ।

Posted on
উপসর্গের বৈশিষ্ট্যঃ
উপসর্গের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, ‘উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে’, উপসর্গগুলোর প্রত্যেকটি এক একটি শব্দাংশ বা শব্দখণ্ড । এদের নিজেদের কোনো অর্থ নেই, বা পৃথকভাবে ব্যবহৃত হয় না। কেবল ধাতু বা শব্দের আগে যুক্ত হলেই এরা শব্দ গঠন করে এবং অর্থের বৈচিত্র্য সাধন করে। উপসর্গ যখন শব্দ গঠন করে তখন গঠিত শব্দের মাধ্যমে মূল ধাতুর অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, সংকোচন বা অর্থের পূর্ণতা সাধন করে। হৃ (হরণ করা) ধাতু থেকে ‘হার’ শব্দটি এসেছে । এই ‘হার’-এর আগে বিভিন্ন উপসর্গ যোগে অনেকগুলো নতুন শব্দ গঠিত হতে পারে। নিচের রেখাচিত্রটি কর :
এভাবে উপসর্গগুলো বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন শব্দ তৈরি করে বলে বলা হয় যে, “উপসর্গগুলোর নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃজনের ক্ষমতা থাকে ? উপসগুলোর সঙ্গে কোনো বিভক্তি বা প্রত্যয় যুক্ত হয় না বলে এদের রূপের কোনো পরিবর্তন হয় না। এ জন্য ব্যাকরণে উপসর্গকে অব্যয় বলেও গণ্য করা হয়।
উপসর্গের শ্রেণীবিন্যাসঃ
বাংলা ভাষায় তিন ধরনের উপসর্গের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। সে হিসেবে উপসর্গ তিন প্রকার। যথাঃ 
 
(১) বাংলা উপসর্গ, 
 
(২) তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ ও 
 
(৩) বিদেশি উপসর্গ ।
১. বাংলা উপসর্গ কয়টিঃ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত খাঁটি বাংলা উপসর্গের সংখ্যা ২১টি। যথা: অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়, আন, আব, ইতি, ঊন (ঊনা), কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা।
২. তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গঃ
বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ হুবুহু এসে গেছে। সেই সঙ্গে সংস্কৃত উপসর্গও তৎসম শব্দের আগে বসে শব্দের নতুন রূপে অর্থের সংকোচন, সম্প্রসারণ করে থাকে ।
 
তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গের সংখ্যা ২০টি। যথা: প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নির, দূর, বি, সু, উৎ, অধি, পরি, প্রতি, উপ, অভি, অপি, অতি, আ।
বাংলা উপসর্গ যেমন বাংলা শব্দের আগে বসে, তেমনই তৎসম উপসর্গ তৎসম (সংস্কৃত) শব্দের আগে বসে। বাংলা উপসর্গের মধ্যে আ, সু, বি, নি- এ চারটি উপসর্গ তৎসম শব্দেও পাওয়া যায়। বাংলা ও সংস্কৃত উপসর্গের মধ্যে এই যে, যে শব্দটির সঙ্গে উপসর্গ যুক্ত হয়, সে শব্দটি বাংলা হলে উপসর্গটি বাংলা, আর সে শব্দটি তৎসম হলে সে উপসর্গটিও তৎসম হয়। যেমন- আকাশ, আগাছা, সুনজর, বিনামা, নিলাজ— এগুলো বাংলা শব্দ । অতএব উপসর্গ আ, সু, বি, নি-ও বাংলা । আবার আকণ্ঠ, সুতীক্ষ্ণ, বিপক্ষ ও নিদাঘ তৎসম শব্দ । ফলে আ, সু, বি, নি উপসর্গগুলো তৎসম উপসর্গও বটে।
৩.বিদেশি উপসর্গ কাকে বলে?
আরবি, ফারসি, ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি ইত্যাদি ভাষার অসংখ্য শব্দ দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলায় প্রচলিত। বিদেশি এসব শব্দ বাংলা ভাষায় অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি উপসর্গেরও আগমন ঘটেছে। বাংলা ভাষার সঙ্গে বিদেশি এসব শব্দ এবং উপসর্গ ঘনিষ্ঠভাবেই একাত্ম হয়ে আছে। বিদেশি ভাষার যেসব উপসর্গ বাংলায় ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে বিদেশি উপসর্গ বলে।

আরো পড়ুনঃ সকল অনুচ্ছেদ রচনার লিংক।

Leave a Reply